বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনা
আপডেট সময় :
২০২৫-০৮-২৭ ২৩:১৮:০১
বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনা
মোসাঃ মিতু খাতুন, (রাবি): মূলত পর্যটন শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে আসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণের ধারণা। আসলে পর্যটন হলো মানুষের এমন কার্যকলাপ যা তারা অবকাশ, ব্যবসা বা অন্যান্য কারণে নিজের পরিচিত পরিবেশের বাইরে এক বছরের কম সময়ের জন্য অবস্থান বা ভ্রমণ করে থাকে।
পর্যটনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন: সাংস্কৃতিক পর্যটন, প্রতœতাত্তি¡ক পর্যটন, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন, ইকো-ট্যুরিজম, এগ্রো-ট্যুরিজম, হালাল ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, শিক্ষামূলক পর্যটন, ডার্ক, ট্যুরিজম, বন্যপ্রাণী পর্যটন, ব্যবসায়িক পর্যটন, ধর্মীয় পর্যটন, নৃতাত্তি¡ক পর্যটন ইত্যাদি। এগ্রো- ট্যুরিজম শব্দটি শুনে অনেকেই ভাবতে পারেন এটি কী? এটি এক ধরনের পর্যটন যেখানে কৃষিজমি বা কৃষি-ভিত্তিক অঞ্চল ভ্রমণ করা হয় কৃষি পদ্ধতি শেখা, গ্রামীণ জীবন উপভোগ করা ও সক্রিয়ভাবে কৃষিকাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আনন্দ পাওয়ার জন্য।
অন্যভাবে বলা যায়, এটি এমন পর্যটন যেখানে খামারে আতিথেয়তা প্রদান করা হয় এবং পর্যটকেরা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন, যেমন কৃষিকাজ শেখা, ফল- সবজি তোলা, ঘোড়ায় চড়া, মধু স্বাদ নেওয়া, স্থানীয় পণ্য বা হস্তশিল্প কেনা ইত্যাদি। অনেকে তাদের খাবার কীভাবে উৎপাদিত হয় তা জানার ব্যাপারে আগ্রহী।
বিশেষ করে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের জন্য এ ধরনের ভ্রমণকে শিক্ষামূলক ও মূল্যবান মনে করেন। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে মানুষ নিয়মিতভাবে র্যাঞ্চ, আঙ্গুরের বাগান, আপেল তোলা, মাছ ধরা ইত্যাদির জন্য যায়। প্রতিটি খামার একটি ভিন্ন ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা দিতে পারে যা পুরো পরিবারের জন্য উপভোগ্য। বাংলাদেশের এগ্রো-ট্যুরিজমের সম্ভাবনা বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এটি একটি কৃষিনির্ভর দেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ।
পাহাড়, বন, নদী, সমুদ্র সৈকতসহ বৈচিত্র্যময় অনেক ভ‚প্রকৃতি রয়েছে, যা কৃষিভিত্তিক পর্যটনের জন্য বহুমুখী অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে। কৃষিপণ্যের প্রধান উৎপাদক বাংলাদেশে ধান, গম, শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ প্রচুর উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের মাটি উর্বর (সোনার মাটি নামে খ্যাত) এবং জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। এ কারণে এখানে সব ধরণের ফসল চাষ সম্ভব। ২০২২ সালের এক জরিপ অনুযায়ী দেশের ৪৫.৪% মানুষ কৃষির সাথে যুক্ত।
অর্থাৎ বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক কৃষক ও গ্রামীণ মানুষ রয়েছেন, যারা কৃষিভিত্তিক পর্যটনে অংশ নিতে বা উদ্যোক্তা হতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ।
তারা আন্তরিকভাবে ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানায়। তাই বাংলাদেশ এগ্রো-ট্যুরিজমের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে, যেখানে পর্যটকরা স্থানীয় সংস্কৃতি জানতে পারবেন এবং নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারবেন। জনপ্রিয় এগ্রো-ট্যুরিজম গন্তব্যসমূহ : সুন্দরবন: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এখানে এগ্রো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে পাখি দেখা, মাছ ধরা, বন্যপ্রাণী সাফারি ইত্যাদি করা যেতে পারে। সিলেটের চা-বাগান: চা আস্বাদন, চা-কারখানা ভ্রমণ এবং পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ। রাজশাহীর ফলের বাগান: আম, লিচু ও অন্যান্য ফল সংগ্রহ, আস্বাদন ও খামার ভ্রমণ। উপকূলীয় মৎস্য গ্রাম: মাছ ধরা, কাঁকড়া ধরা এবং ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার কৌশল শেখা। বরেন্দ্র অঞ্চলের ধানের মাঠ: ধান কাটা, চাষাবাদ শেখা, কৃষিকাজে অংশগ্রহণ এবং গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ। কৃষিভিত্তিক পর্যটনের উপকারিতা ১. আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি: কৃষক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি হবে। ২. ঐতিহ্য সংরক্ষণ: কৃষি-সংস্কৃতি, লোকজ কারুশিল্প, রান্না ও উৎসব পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। ৩. প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ: টেকসই কৃষি ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ৪. কৃষি বৈচিত্র্য প্রদর্শন: ধান, পাট, চা, ফলের বাগান, মাছ চাষ ইত্যাদি পর্যটকদের জন্য শিক্ষামূলক হবে। ৫. অবকাঠামো উন্নয়ন: পর্যটন অবকাঠামো (বাসস্থান, পরিবহন, সুবিধা) উন্নত হবে। চ্যালেঞ্জ 'অবকাঠামোর অভাব 'সচেতনতার অভাব 'দক্ষ জনশক্তির অভাব তবুও, সঠিক পরিকল্পনা, বিনিয়োগ ও সহযোগিতা থাকলে বাংলাদেশের এগ্রো-ট্যুরিজম একটি বড় আয়ের উৎস হতে পারে। কৃষক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে এবং দেশীয় সংস্কৃতি সংরক্ষিত হবে। বাংলাদেশের এগ্রো-ট্যুরিজম সাংস্কৃতিক বিনিময়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা। বৈচিত্র্যময় কৃষি কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে এবং গ্রামীণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ এমন একটি অনন্য ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে যা পর্যটক ও স্থানীয় উভয়ের জন্যই উপকারী হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স